মিরপুর প্রতিনিধি:
কুষ্টিয়ার মিরপুর প্রেসক্লাবের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এবং আলো স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ফিরোজ আহম্মেদ জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতাল থেকে রেফার্ড হয়ে বর্তমানে ঢাকার মহম্মদপুরের ট্রমা সেন্টার অ্যান্ড এও স্পেশালাইজড হাসপাতাল (প্রাইভেট) লিমিটেড এ ভর্তি রয়েছেন। (এ তথ্য সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ১১ টার) কর্তব্যরত চিকিৎসক জানিয়েছেন ধারালো অস্ত্রের আঘাতে মাথার বাম পাশের পিছনের অংশের হাড় ভেঙে তার কুচি অংশ ব্রেনের মধ্যে রক্ত সঞ্চালনে বাধা প্রদান করছে, অন্যদিকে বুকের বাম পাশের পাজরের তিনটি হাত ভেঙে তার ধ্বংসাবশেষ লাঞ্চের গতিপথ কিয়দংশ বন্ধ করে ফেলেছে একই সাথে বাম পায়ের হাঁটুর বাটিটি ফ্রাকচার হয়ে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে পড়েছে।
হত্যার উদ্দেশ্যে তার উপর এ জঘন্যতম আঘাতে সে মুমূর্ষ অবস্থায় সময় অতিবাহিত করছে। তার এই মুমূর্ষ অবস্থায় প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে চিকিৎসক জানিয়েছেন, ৭২ ঘন্টা অতিবাহিত না হলে এ রোগী সম্পর্কে কোন কিছু মন্তব্য করা যাবে না।
প্রায় দুই যুগের অধিক সময় ধরে ফিরোজ আহম্মেদ সাংবাদিকতার পাশাপাশি আলো স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের ব্যানারে মিরপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার হতদরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে নিঃস্বার্থভাবে সেলাই মেশিন, ছাগল বিতরণ, অর্থনৈতিক সহযোগিতা, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর আত্মসমাজিক উন্নয়নে নানা সময়ে ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করে তাদেরকে আত্মনির্ভরশীল হিসেবে গড়ে তুলেছেন, বিশেষ করে মহামারী করোনা কালীন সময়ে উপজেলার বিভিন্ন জনপদের দরিদ্র মানুষের পাশে থেকে ৫’সহস্রাধিক পরিবারের মাঝে চাল ডাল তেল সহ বিভিন্ন মৌলিক প্রয়োজনের জিনিস বিনা টাকায় তাদের হাতে তুলে দিয়েছেন। যার সাক্ষী রয়েছেন সমাজের এলিট এবং সুশীল লোকজন।
সমাজে যে মানুষটি নিঃস্বার্থভাবে নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে মানবের কল্যাণে কাজ করেছেন। সেই মানুষটিকে মীমাংসিত একটি বিষয়ের সূত্র ধরে দৌলতপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান টোকন চৌধুরী অন্যতম ক্যাডার দৌলতপুর উপজেলা শাখার যুবলীগের সদস্য মিলন হোসাইন ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর হাতে ফজরের নামাজের সময় মিরপুর পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সেক্টরপাড়স্ত স্থানে সন্ত্রাসীদের হাতে গুরুতর রক্তাক্ত জখম হতে হলো। যখন সন্ত্রাসীদের এলোপাথাড়ি দেশীয় অস্ত্রের আঘাতে ফিরোজ আহম্মেদ শিকার হন তখন তাদেরকে বলেছিল ভাই আমি মসজিদে ফরজ নামাজ আদায় করতে যাচ্ছি, আমাকে তোমরা মেরো না। তার এই ধর্মীয় অনুভূতির আবেদনটি মানুষরূপী পশুগুলোর হৃদয়ে বিন্দুমাত্র দাগ কাটেনি। এরপর তিনি যখন অবচেতন অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তখন সন্ত্রাসীরা ডেড ডেড বলে স্থান ত্যাগ করে।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, মিলন হোসাইন দৌলতপুর উপজেলার রিফায়েতপুর ইউনিয়নের বাজুডাঙ্গা গ্রামের মো. আফসার’র ছেলে। বিগত আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে উপজেলা যুবলীগের সভাপতি টোকন চৌধুরীর হাত ধরে যুবলীগের নেতা বনে যায়। পরবর্তীতে এলাকার ত্রাস হিসেবে মিলন তার নিজস্ব অবস্থান তৈরি করে নেয়। সেই সুবাদে মাদক ব্যবসা,অস্ত্র বিকিকিনি ও চাঁদাবাজি করে লক্ষ লক্ষ টাকা কামিয়ে নেয়। তার অত্যাচারের মাত্রা যখন সীমা পেরিয়ে যায় তখন তার প্রতি টোকন চৌধুরী বিরাগ ভাজন হওয়ার ফলে সন্ত্রাসী মিলনের বিরুদ্ধে দৌলতপুর থানায় অস্ত্রসহ বিভিন্ন মামলা রুজু হয়, বর্তমানে সে মামলাগুলো থেকে জামিনে মুক্তিতে আছে।
খোঁজ নিয়ে আরো জানা যায়, ২০২৩ সালের গোড়ার দিকে স্থানীয় বিএনপি’র সমর্থক এক কৃষকের কাছে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করে। দাবিকৃত চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে কৃষকের ১৭ বছরের ছেলে বুলবুলকে অস্ত্র মামলায় জড়ানের ফাদ পেতে কুষ্টিয়া র্যাবে সংবাদ দেয়, র্যাব ঘটনাস্থলে হাজির হয়ে বিষয়টি বুঝে ফেলে ওই অস্ত্র দিয়ে সন্ত্রাসী মিলনকে স্থানীয় থানা পুলিশের মাধ্যমে কুষ্টিয়া কোটে চালান করে।
২০২৪ সালের ৫আগস্ট স্বৈরাচার সরকারের পতন হলে ৭ই আগস্ট তার (সন্ত্রাসী মিলন) বাড়ির মোড়ে গনপিটানীর শিকার হয়। এরপর পরই সে মিরপুরের জনৈক ব্যক্তির হাত ধরে মিরপুর পৌরসভার সেক্টরপাড়ায় বাসা ভাড়া করে সেই বাসায় অবস্থান নেয় এবং সেখানে “দারিদ্র্য বিমোচন জনকল্যাণ প্রকল্প নামে” অনিবন্ধিত একটি সংগঠন খুলে বসে দৃশ্যমান কিছু সমাজ কল্যাণের কাজের আড়ালে সুদের ব্যবসা শুরু করে।
কুখ্যাত সন্ত্রাসী মিলন শান্ত মিরপুর কে অশান্ত করার লক্ষ্যে এটেম টু মার্ডার সহ বিভিন্ন নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টির নেপথ্যের খলনায়কের বিষয়টি সরকারি গোয়েন্দা সংস্থা এবং সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কর্মকর্তারা একটু গভীরে খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিলে হয়তোবা এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা থেকে মিরপুরবাসি নিষ্কৃতি পাবে।